ঈদ অর্থনীতির আকার বাড়ছে

Passenger Voice    |    ১০:৫৬ এএম, ২০২৪-০৪-০৬


ঈদ অর্থনীতির আকার বাড়ছে

ঈদের চিরায়ত আকর্ষণ গ্রামেই বেশি। এ জন্য নাড়ির টানে ছুটে চলা। হোক না তা শত ঝক্কি-ঝামেলার। স্বজনের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপনে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ টার্মিনালে ভিড় বেড়েছে ঘরমুখো মানুষের। ট্রেনে আপাতত নির্বিঘ্ন যাত্রা হলেও চাপ মহাসড়কে, গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। রাজধানী ক্রমশ হচ্ছে ফাঁকা। যাওয়ার আগে সবাই সারছেন কেনাকাটা।

জুতা থেকে চুড়ি-ফিতা, সেমাই থেকে গহনা, ফুটপাত থেকে অভিজাত– সব ধরনের মার্কেটে এখন উপচে পড়া ভিড়। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী করছেন কেনাকাটা। ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও ঈদ অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে বলে মনে করছেনসংশ্লিষ্টরা। যদিও দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ঈদের কেনাকাটা এবারও ‘বিলাসিতা’।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর অভিজাত বিপণিবিতান বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, নিউমার্কেট, ফার্মগেট, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট ও ইসলামপুরে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। পোশাক থেকে শুরু করে জুতা, প্রসাধনী, ভোগ্যপণ্য সব দোকানেই বেড়েছে বিক্রি।

ইসলামপুরের জাকির ক্লথ স্টোরের স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন জানান, পাইকারি ও খুচরা দুই ধরনের ক্রেতারা এ মার্কেটে ভিড় করছেন। ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবির পাশাপাশি কাটা কাপড়ের পাঞ্জাবির চাহিদা এবার বেশি।

ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের মতে, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চিত্র বদলেছে। এক সময় ঈদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ ছিল পোশাক, জুতা, অলংকার ও সেমাই-চিনির মধ্যে। এখন তা গৃহস্থালি থেকে পৌঁছেছে প্রসাধনীতে। ঈদ ঘিরে বেড়েছে দেশ-বিদেশে ভ্রমণের প্রবণতাও। ফলে প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদ ঘিরে অর্থপ্রবাহ বাড়ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের চাহিদা মেটাতে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার গার্মেন্ট পণ্য আমদানি করা হয়। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে দিনে গড়ে ৩০ হাজার টাকার পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজসহ নানা পোশাক বিক্রি হয়, সেখানে ঈদের আগে গড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ হাজার টাকার পণ্য। দিনে গড়ে ৩ লাখ টাকার অলংকার বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, ঈদে সারাদেশে ২৫ লাখ দোকানে কেনাবেচা হবে। মুদি থেকে শুরু করে নানা পদের দোকানে বছরের অন্য সময় গড়ে দিনে ৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হলেও, এখন তা বেড়ে তিন গুণ হয়েছে।

দেশের ঈদ অর্থনীতি নিয়ে সরকারিভাবে কোনো গবেষণা নেই। তবে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সমীক্ষা বলছে, ঈদুল ফিতর কেন্দ্র করে ১ লাখ ৬৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। সমিতির তথ্যমতে, ২০২৩ সালে রোজা ও ঈদ ঘিরে সম্ভাব্য অতিরিক্ত অর্থপ্রবাহ ছিল প্রায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। এবার এটি কিছুটা কমতে পারে।

রেমিট্যান্সের বড় অংশ যুক্ত হয় ঈদ অর্থনীতিতে। গত মার্চে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ২২ হাজার কোটি। এ অর্থের বেশির ভাগই খরচ হবে ঈদ ঘিরে। এসব মিলে এবার ঈদ অর্থনীতির আকার ২ লাখ টাকা কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তাছাড়া এবার ঈদের পরই পহেলা বৈশাখ বাংলা বর্ষবরণ। এ উৎসব ঘিরেও বেশ কেনাবেচা হয়। এটিও এবার ঈদ অর্থনীতিতে বাড়তি মাত্রা যোগ করবে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয়। মানুষের কেনার সামর্থ্য বাড়ছে, অস্বীকারের সুযোগ নেই। ফলে ঈদ অর্থনীতির আকারও বড় হচ্ছে। তবে মানুষের আয়ের বেশির ভাগ খরচ হয়ে যায় দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে। অবশ্য এবার পহেলা বৈশাখে কেনাবেচা কম হবে বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী নেতা। তার মতে, ঈদের এক দিন পরই পহেলা বৈশাখ। তাই এ উৎসব উপলক্ষে মানুষ আলাদা কেনাকাটা থেকে বিরত থাকবে।

অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, যে কোনো উৎসবে বিশ্বে কেনাকাটা বেড়ে যায়। বড় দিন ঘিরে ইউরোপ-আমেরিকায়, নববর্ষ ঘিরে চীনে ব্যাপক হারে কেনাকাটা করে মানুষ। মুসলিমপ্রধান দেশে সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা হয় দুই ঈদে। বাংলাদেশে ঈদুল ফিতরে বেশি কেনাকাটা হয়। তবে ঈদ অর্থনীতির আকারের সঙ্গে কিছুটা দ্বিমত করে তিনি বলেন, ঈদে উচ্চ ও মধ্যবিত্তরা বেশি কেনাকাটা করবেন। নিম্ন, মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ কেনাকাটা করবে খুবই কম। কারণ দেশে এখন মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি। সূত্র: সমকাল

প্যা.ভ/ত